কেরানীগঞ্জ কলাতিয়ায় মাদক প্রতিরোধ কমিটি করে সচেতন করলো নাজিরপুর সমাজকল্যান সমিতি

দেশটা স্বাধীন হলো ৭১ এ, আমরা পেলাম লাল সবুজের পতাকা আর ছোট্ট একটি মানচিত্র। এরইমধ্যে পেরিয়েছে অনেক বছর, কতো নেতা এলো গেলো! কেউ কালো টাকায় কিনছে রাজনীতি, আবার কেউ ছড়িয়েছে ভয়াবহ মাদক! কিন্তু কতিপয় নেতারা নির্বিকার থাকলে এবার মাদকের বিরুদ্ধে অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। জীবন বিনাশী নীল নেশা মাদকদ্রব্য। এ এক তীব্র নেশা। এই নেশায় আমাদের কেরানীগঞ্জ তথা কলাতিয়া এলাকার যুব সমাজ তথা শিক্ষার্থীরাও যখন ভয়াবহ মাদকের দিকে ঝুকতে থাকে। কিশোর কিশোরীসহ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংকিত হয়ে পড়ে অভিভাবকরা। ঠিক সেই মুহুর্তে কলাতিয়ার কিছু উদ্যোমী যুবক ও অভিভাবকদের মাদকের ব্যাপারে সচেতন করতে সাহসের সাথে এগিয়ে আসে “মাদক প্রতিরোধ কমিটি” গঠন করে নাজিরপুর সমাজকল্যাণ সমিতি। এই সংগঠনের মাধ্যমে মাদকে আক্রান্ত এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবস্থা যেনো আরো ভয়াবহ আকার ধারন না করে সে সব বিষয়ে নানা কর্মসূচী পালন করতে থাকে। এতে এই এলাকার মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের হুমকী ধামকীও পেতে হয় একের পর এক। কিন্তু তবুও থেমে যায়নি “মাদক প্রতিরোধ কমিটি”র কার্যক্রম। এক সময় এই কমিটির কার্যকরতা দেখে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সাধুবাদ জানানো হয়। আমাদের দেশের অসংখ্য তরুণ, তরুণী বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। গ্রামে,ও এলাকাসহ বর্তমানে সমাজের রন্ধে রন্ধে দাবানলের মত ছড়িয়ে পডছে এই মরণ নেশা। মূলত বন্ধু-বান্ধবদের সাহচর্যে সিগারেট থেকে নেশা শুরু হয় এবং পরে ধীরে ধীরে মাদকের প্রতি আসক্তি হয়। আর এই মরণ নেশা আসক্তি থেকেই যুব সমাজ আজ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ কে মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে কলাতিয়া ইউনিয়নে নাজিরপুরের কিছু তরুণ যুবক মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির সভাপতি পলাশ খান । কমিটির প্রতিটি সদস্য মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও সেমিনার করতে থাকে। সেই উন্নয়নকে যাতে কোনোভাবেই মাদক ব্যবসায়ীরা বাধাগ্রস্ত না করতে পারে। প্রতিনিয়ত স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এমনকি প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গিয়ে উঠান বৈঠক পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সাথে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে এক ঝাঁক তরুণ যুবক। আজ অনেকটা গর্বের সাথে বলতে পারে “মাদকের বিরুদ্ধে রুখলে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ”।
আমাদের ভিশন ও মিশন হলো; মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়া এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি।
তরুণ সমাজের বহু মেধাবী ও সম্ভাবনাময় প্রতিভা মাদকের নেশার কবলে পড়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে সামাজিক অবক্ষয়ের পথ বেছে নিয়েছে।
মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা ও জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে না, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করছে নানাভাবে। যেসব পরিবারের সদস্য নেশাগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পরিবারের দুর্দশা অন্তহীন। জীবনবিধ্বংসী এ নেশার কবলে পড়ে অসংখ্য তরুণের সম্ভাবনাময় জীবন নিঃশেষিত হচ্ছে।
নাজিরপুর সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি মামুনার রশিদ বলেন- যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, তাই জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমে এর প্রতিকার করা সম্ভব। যার যার ঘরে পিতা-মাতা থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাড়া, মহল্লা বা এলাকায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘৃণা প্রকাশের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

এ ব্যাপারে নাজিরপুর সমাজকল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জাকির এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবন থেকে মাদকদ্রব্য উৎখাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। এর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে। প্রতিটি পরিবারপ্রধানকে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। পারিবারিক অনুশাসন, নৈতিক মূল্যবোধ ও সুস্থ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে।
মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ ও আন্দোলন, তার সূতিকাগার হতে হবে পরিবার। জনগণকে প্রাণঘাতী নেশার ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, এর কুফল সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রদান করতে হবে। ‘মাদক যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে এবং আমরাই মাদককে নিয়ন্ত্রণ করব সৃজনশীলতা, কল্যাণ, শান্তি ও সৌন্দর্যের জন্য’—এটাই হোক আমাদের মূলমন্ত্র!
প্রকাশক : আতিকুজ্জামান পিন্টু
প্রচারে : আপন জানালা ।